রাজনীতিতে গাধামি করার সুযোগ নেই। বোকামি বা ভুলের জন্য কেউ করুণা করে না। বরং এর মাশুল দিতে হয়।

মুরাদ হাসান নামের এক অখ্যাত লোক, যাকে আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলে বিনাভোটের এমপিগিরি ও আধামন্ত্রিত্ব উপহার না দিলে দেশের লোক চিনতোই না; সেই লোক বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তার কন্যা জায়মা রহমানকে অশ্লীল, কুৎসিত ও নোংরা ভাষায় গালাগাল করেছেন। খুবই ঘৃণ্য কুৎসা রটিয়েছেন তাদের নামে। এক পরিবারেরের তিন প্রজন্মের এই তিন সদস্য সারা দুনিয়ায় পরিচিত। দেশে তাদের সমর্থক আছে কোটি কোটি লোক। তাদের তুলনায় মুরাদ কিছুই না; একটা নস্যি মাত্র।

শুধু মুরাদ নয়, শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মহল্লার ছিঁচকে যে মস্তানটা আওয়ামী কোনও একটা অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড শাখা সদস্যের হয়ে চাঁদাবাজি-ছিনতাই করে সেও এখন অবলীলায় এরকম গালাগালি দেয় ও কুৎসা রটায় তাদের নামে। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রেস ব্রিফিং, টক শো, খবরের কাগজের কলাম, দলীয় সভা এমনকি পথের পাশের চায়ের টং দোকানে পর্যন্ত এখন চলে এ গালাগালি ও কুৎসা। এমনকি আমি নিজের চোখে দেখেছি ও নিজ কানে শুনেছি, চাকরিরত এবং ইউনিফর্ম পরা এক পুলিস কনস্টেবল বিএনপির চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে গালি দিচ্ছে।

এরা কেন গালি দেয় বা গালি দেয়ার সাহস পায়? সাহস পায় কারণ, বৈধ-অবৈধ যে পথেই হোক হাসিনা ক্ষমতায় আছেন এবং তিনি বিএনপি, জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বা তাদের পরিবারের সবাইকে যে-কোনও উপলক্ষেই নিয়মিত গালি-গালাজ করেন। তিনি এ ব্যাপারে অন্যদের উৎসাহিত করেন, উস্কে দেন এবং কেউ করলে খুবই খুশি হন। অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট। এটা সকলেই জানে ও বুঝে। আর তাই গালিগালাজের ঝড় বয়ে যায়। মুরাদ অনলাইনে প্রকাশ্যে সে কাজটাই করেছেন। তাছাড়া তিনি নিজেও খুব বিকৃত রুচির পারভার্টেড লোক। সেটা তার অন্যান্য সংলাপ থেকেও জানা গেছে।

এমন লোকের নিন্দা ও শাস্তি দাবি প্রতিটি সভ্য লোকেরই করা উচিত, সেটা চলছিলও। মুরাদের কুৎসিত কথা-কাজে বর্তমান সরকারের কারো কোনও অভিযোগ না থাকলেও মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভের মুখে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অন্ততঃ সরাতে বাধ্য হয় তারা। এরপর জনঘৃণা থেকে নিস্তার পেতে সভ্য দেশে আশ্রয় নিতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন মুরাদ। প্রমাণ হয়, এসব ইতরামি ও অসভ্যতা সভ্যজগতে বরদাস্ত করা হয় না।

মুরাদ ইস্যুতে বিএনপি নিন্দা-প্রতিবাদ-শাস্তি দাবি করে সঠিক রাজনৈতিক পথেই ছিল। কিন্তু হুট করেই তারা আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়। এটাকে আমার কাছে চরম রাজনৈতিক গাধামি বলেই মনে হয়েছে।

আচ্ছা, রাজনৈতিক পরিচিতি ও সংশ্লেষ আছে এমন কোনও মামলায় বাংলাদেশে এখন কি সুবিচার পাবার কোনও পথ খোলা আছে? নাই যে সেটা বিএনপির চেয়ে বেশি ভালো আর কে জানে? এই নির্মম অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থাকা সত্বেও বিএনপি কেন মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলো? এখন আর মুরাদের ব্যাপারে সরকারের কোনও দায় থাকলো না। তারা বলবে, এ নিয়ে মামলা হয়েছে, বিষয়টা আদালতের আওতায় চলে গেছে, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের কিছু করার নাই।

সরকারের দায় এমন সুন্দর করে নিজের ঘাড়ে টেনে নেয়া বিএনপি ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর সব থিতিয়ে গেলে মুরাদ হয়তো আদালত থেকে সাফ-সুতরো হয়ে বেরিয়ে আসবেন।

তাছাড়া, আরেক কাণ্ড যা করেছে বিএনপি সেটার তো কোনও জবাবই নাই। মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠন, গণতান্ত্রিক সরকারগুলোসহ দুনিয়ার সভ্য মানুষেরা আওয়ামী সরকারের যে জঘণ্য কালাকানুনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং ক্ষমতায় গেলে যেটি বাতিলের ব্যাপারে বিএনপিও জাতির কাছে অঙ্গিকারাবদ্ধ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নামের সেই জঘণ্য কালাকানুনে মামলা ঠুকেছে বিএনপি। কী আর বলবো বলেন? এখন কি এই মামলা বিএনপির কাছে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা?

মারুফ কামাল খান : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব